বীরপ্রতীক তারামন বিবি
কলমেঃ মোঃ আমিনুল এহছান মোল্লা
রাওনাট,কাপাসিয়া,গাজীপুর
*********************************************
ধুলো–ওঠা গ্রাম, নদীর ধারে কাচারীপাড়া,
চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল এক কিশোরী—
কিন্তু বুকের ভেতর আগুন, চোখে বিদ্রোহী ঝড়।
নাম তার তারামন বিবি—
ইতিহাসের পাতায় যার নামের পাশে জ্বলে উঠে বীরপ্রতীকের তলোয়ার।
রাজিবপুরের নিশ্বাসভারী রাত,
শিয়ালের হাহাকার ফুঁড়ে
সে হেঁটে যায় শত্রুশিবিরের পাশ ঘেঁষে—
সাধারণ মেয়ে সেজে,
কিন্তু চোখে গেরিলা গোপন নকশা।
গমের দানা, ভাতের হাঁড়ি, ছাইভরা চুল্লি—
এসবের আড়ালে সে বহন করত আগুনের বার্তা।
স্টেনগানের ট্রিগারে তার ক্ষুদ্র আঙুল ছুঁতেই
চমকে উঠেছিল রাত,
ভয়ে পিছিয়েছিল রাজাকারদের হিংস্র মুখ।
শব্দহীন পদক্ষেপে সে ছিল ছায়া,
তবু তার অস্তিত্ব জ্বলে উঠত বজ্রের মতো—
যখন পাকিস্তানি মিলিটারি আসে খোঁজে,
তখনো হাসতো তারামন!
কারণ দেশ বাঁচানো মানুষ ভয়ে নয়,
বিশ্বাসে বাঁচে।
রাতের আক্রমণে যখন এলএমজি গর্জে ওঠে,
তারামনের হাতে আলো কাঁপত—
মুক্তির অগ্নিশিখা যেন বন্দুকের মুখে নাচত।
গেরিলা দলে তাকে সবাই ডাকত—
“তারামন আপা— আগুনমেয়ে!”
১৯৭১— বিজয়ের ভোরে
সে ফিরে গেল সাধারণ জীবনে,
কিন্তু তার বুক ভরা সাহস
আমাদের স্বাধীনতার স্তম্ভে খোদাই হলো নীরবে।
দীর্ঘদিন হারিয়ে থাকা বীরত্ব
একদিন আবার আলো পেল—
জাতি বলল,
“এ যে আমাদের তারামন— বীরপ্রতীক, আগুনের কন্যা!”
আজও যখন কুড়িগ্রামের ভোরে কুয়াশা নামে
আমি শুনি তারামনের ছুটে চলা পায়ের শব্দ,
শুনে ফেলি ফিসফিসিয়ে ওঠা যুদ্ধের গান—
স্বাধীনতার মাটিতে তাঁর নাম
একটি বিপ্লবী দীপশিখা,
যা এখনও জ্বলে,
জ্বলতেই থাকে—
বাংলার প্রতিটি সাহসী হৃদয়ে।
তোমাকে সালাম,
হে তারামন বিবি,
হে আগুনের মেয়ে,
হে দুর্জয় গেরিলা,
হে স্বাধীনতার লৌহ–শিখা!
এই ভূমির প্রতিটি শ্বাসে
তোমার বীরত্বের ধ্বনি—
এই দেশের প্রতিটি শিশুর চোখে
তোমারই শেখানো সাহসের আগুন।
আমরা মাথা নত করি,
মুক্তির মাটিতে শ্রদ্ধার ফুল ছড়িয়ে দিই—
কারণ তুমি প্রমাণ করেছো,
স্বাধীনতা শুধু পুরুষের যুদ্ধ নয়;
স্বাধীনতা নারীরও আগুন, নারীরও বিপ্লব।
----------------------------------------------------
০২-১২-২০২৫
No comments:
Post a Comment