সংস্কৃতির গলা টিপে ধরেছে
কলমেঃ মোঃ আমিনুল এহছান মোল্লা
রাওনাট,কাপাসিয়া,গাজীপুর
****************************************
বুকের ওপর পা তুলে বসে অশুভের কাঁকড়া দল,
স্বাধীনতার বাতাস গিলে ফেলে ধোঁয়ার মতো সলসল;
মায়ের বুকে হামলে পড়ে সেই চেনা পুরোনো শকুন,
মুখে দুধ-সাদা বাণী, অন্তরে শুধু অন্ধকারের ধুন।
ইতিহাসের পাতাগুলো আজ কুঁচকে গেছে ভয়ে,
যেন কেউ লাল কালিতে লিখে দেয় অপমানেরই শোয়ে;
মুনাফিকেরা গলা পরিষ্কার করে ওঠে কূট-গলায়—
“সংস্কৃতি? ও তো পুরোনো জিনিস—রাখে কে আর খেয়াল বড়োই?”—বলে যায়।
বলেন দেখি, ভাটিয়ালির বাঁশি কি আজ জলে বাজে?
বাউলের কণ্ঠে লালনের ডাক কতটা পথেই সাজে?
নবান্নর ধান কি মেলে এখন বাজারের ভীড় ঠেলে?
নাকি রেডিমেড সভ্যতায় সব গন্ধ মরে গিয়ে ঢলে?
চৈত্রবরণের জয়ধ্বনি কি দাঁতে দাঁত চেপে হাঁফায়?
মঙ্গলযাত্রার রঙগুলো কি বিজ্ঞাপনের দেশে হারায়?
পৌষমেলার খোলা মাঠে আজ স্পিকারের ঝড়,
ছেলেটা গাইতে চাইল “ভ্রমর কইও”—মাইক চেঁচায়—“অর্ডার দে আরও জোর!”
গানের সুরে হারিয়ে যাওয়া করিম-হাসনের আর্তি,
চিত্রকরের রঙ শুকিয়ে যায় বাবুই পাখির স্মৃতি;
পালাগানে নৌকা ডোবে রাতের গভীর জলে—
দোষ কার? কেউ কি শুনবে?—সবাই ব্যস্ত নিজের চালে।
আর মীরজাফরেরা?
ওরা তো এখন ভদ্রলোক—ইউরোপীয় পারফিউম গায়ে,
পাতার আড়াল থেকে বলে, “সংস্কৃতি? সে তো গল্প, আজকাল কে আর চায়!”
কিন্তু তাদের চোখে লালচে নখ, পরাজয়েরই বংশধারা,
যে পতাকা একদিন হারিয়েছিল—আবার তুলে ধরতে চায় সারা।
তবুও—
জাগো জাগো হে বাঙালি,
এ মাটি তোমার, এ ভাষা তোমার, এ গন্ধেরই তুমি স্বজন;
সংস্কৃতি মানে পোশাক নয়—এ হল শিকড়, রক্তের সজল বন্ধন।
দাঁড়াও, বুক ঠুকে বলো—
যে দেশে নাচে বাউলসুর, ঢাক বাজে উৎসব-পথে,
সে দেশকে অশুভের হাতে তুলে দেওয়া লজ্জা—
আর লজ্জা সহ্য নয় তাতে।
জাগো, কারণ আলো অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে—
জেগে উঠলেই আবার বাঁচবে বাঙালির হাজার বছরের গৌরবময় দিগন্তে।
---------------------------------------------
২৪-১১-২০২৫
No comments:
Post a Comment