এ লজ্জা কার?
কলমেঃ মোঃ আমিনুল এহছান মোল্লা
রাওনাটমকাপাসিয়া,গাজীপুর
*************************************************
কাপাসিয়ার তটে, মৈশন গাঁয়ের পথে,
প্রভাতের শিশির ভেজে ইতিহাসের বুক,
যেথা একদা ধ্বনি তুলেছিলো মাইকের রথে,
তাজউদ্দীনের ভাষণ জ্বালায় আশার শ্লোক।
সেই চারজন বীর— জাহান্দার, হজু, দৌলত, মিয়া,
মাথায় মাইক তুলে ছুটে যেতেন সভামঞ্চে,
চার্জহারা ব্যাটারি কাঁধে নিয়ে প্রিয়া,
রাত কাটাতেন রেলঘরে, মশার দংশনে।
তখনো ছিলো না বিদ্যুৎ, না অর্থ, না খ্যাতি,
ছিলো শুধু মুক্তির ডাক, স্বাধীনতার জ্যোতি,
তবু ওরা দিয়েছিলো প্রাণের আনুগত্য,
সোনালী দিন গিয়াছে— পড়ে আছে স্মৃতি।
আজ প্রিয় বাংলাদেশ কংক্রিটে দাঁড়ায় দৃঢ়,
স্বপ্নে সোনার তরী ভাসে, গগনে নীল ধ্বনি,
তবু সেই বৃদ্ধ মিয়া, লাঠিতে ভর দিয়া,
দাঁড়ায় লজ্জায়, হে মানব! কিসের গৌরবগান ধ্বনি?
তাজউদ্দীনের সাথী— বঙ্গতাজের ছায়া,
দুর্জয় সে মাইকম্যান, ইতিহাসের দোভাষী,
যার কণ্ঠে একদিন জেগেছিলো মহাকাব্য,
আজ কাঁপে ক্ষুধায়, ব্যথায়, প্রণয়ে নিঃশেষী।
সিমিন হোসেন রিমি, মানবিক কন্যা তুমি,
খোঁজ নাও বীরের, যেথা ক্ষয়ে যায় চরণে ধূলি,
তোমারই পিতার পাশে হেঁটে যারা আনিল ভুমি,
তাদেরই বুক আজ খালি, কালের খেলায় ভুলি।
জাহান্দার মিয়া ঘুমায় ১৯৮০ তে,
ফজলুল হক ফজু গেলো ’৯৪-র রাতে,
দৌলত আলী নিঃশব্দে নিশ্বাস গুণে প্রাতে,
মিয়া উদ্দীন বেঁচে, কেবল মৃত্যুর প্রহরে।
হে জাতি! আজ বলো তবে— এ লজ্জা কার?
যে বীর রেখেছিলে তোর স্বাধীনতার দোর,
সে আজ দাঁড়িয়ে ক্ষীণ, অশ্রুতে অপরাধী,
হে বাংলাদেশ! তুই কি ভুলেছিস তার চোর?
“ইতিহাসের সোনালী পাতা আজ কেবল ঝরা,
তবু সেই পাতা থেকেই উঠে আসে প্রশ্ন —
এ লজ্জা কার?”
------------------------------------
২৮-১০-২০২৫
No comments:
Post a Comment