আলোকিত জীবন
কলমেঃ মোঃ আমিনুল এহছান মোল্লা
রাওনাট,কাপাসিয়া,গাজীপুর
********************************
ঘাগটিয়ার ক্ষীণ আলোয়, জানুয়ারির প্রথম প্রভাতে ১৯০১ সালে জন্ম নিল এক দীপ্তিমান প্রাণ,
ফকির আবদুল মান্নান শাহ—যিনি ইতিহাসের অটল পথে রেখেছিলেন অমোঘ পদচিহ্নের ধ্বনি।
পিতা ফকির আব্দুল ওয়াহাব, মাতা মোছাম্মৎ রুছমুতেন নেছা—
দুই জনের আশীর্বাদে জ্বলে উঠল বিদ্যা, ন্যায় ও মানবিকতার অমলিন দীপক।
মাদ্রাসার নিরিবিলি ছায়ায় শুরু শিক্ষার সূক্ষ্ম আলো,
১৯২৫ মেট্রিক, ১৯২৭ ইন্টারমিডিয়েট, ১৯২৯ স্নাতক, ১৯৩৪ আইন (বিএল)—
জ্ঞান ও ন্যায়ের মিশ্রণে গড়ে ওঠল এক আলোকিত চরিত্র।
শিক্ষকতার মাধমে কর্মজীবনের সূচনা,
চব্বিশ পরগনার আলীপুর জজ কোর্টে পদার্পণ আইনপেশার পথে।
১৯৩৫ সালে ঢাকা জজকোর্টে যোগদান,
১৯৫১ সালে হাইকোর্টে এডভোকেট—সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক।
ঢাকা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টা ও সিন্ডিকেট সদস্য,
ঢাকা জেলা কারাগার পরিদর্শন কমিটির সদস্য—
প্রজ্ঞা, ন্যায় ও মানবতার দীপ্ত আলো ছড়িয়ে।
রাজনীতির অঙ্গনে প্রবেশ ১৯৩৬ সালে কৃষক প্রজা পার্টির মাধ্যমে,
১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের প্রার্থী, পাকিস্তান আন্দোলনের অটল নেতা।
১৯৪৭-১৯৫৪: পূর্ববাংলার আইন পরিষদের এমএলএ,
১৯৫৩-১৯৫৮: সাধারণ সম্পাদক, পরবর্তীতে ১৯৬৫-১৯৬৯: সভাপতি—
কনভেনশন মুসলিম লীগের মঞ্চে যুগান্তকারী নেতৃত্ব।
১৯৫৪ সালে নির্বাচনে পরাজয়, তবে ব্যর্থতা নয়, অনুপ্রেরণা,
জনকল্যাণ ও ন্যায়ের প্রতি অমোঘ প্রতিজ্ঞা।
১৯৬৫-১৯৬৯: পূর্ব পাকিস্তান মন্ত্রী পরিষদের সদস্য,
কৃষি ও খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব—জনতার আশীর্বাদ ও দেশপ্রেমের প্রতীক।
পারিবারিক জীবনও আলোকিত—
বড় ছেলে হান্নান শাহ: সাংসদ, পাটমন্ত্রী, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিএনপি রাজনীতিবিদ।
মেঝ ছেলে শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান: সুপ্রীম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারক।
ছোট ছেলে মোবারক শাহ: যুক্তরাষ্ট্রে আমেরিকান এক্সপ্রেসে কর্মরত।
বড় মেয়ে আনোয়ারা ইদ্রিস: সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের প্রথম মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান।
ছোট মেয়ে আঞ্জুমান আরা বেগম মিনু: আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক, বর্তমান আমেরিকা প্রবাসী।
ধর্ম ও ন্যায়ের দীপ্তি দিয়ে পথিকৃতিকে আলোকিত করলেন,
দেশপ্রেম ও মানবিকতার প্রতিটি স্পন্দনে মনকে জাগ্রত করলেন।
সত্যের পথে চলার অটল দৃঢ়তা ছিল তাঁর অস্ত্র,
অবিচল ন্যায়বোধ ছিল তাঁর অমোঘ যোদ্ধা।
প্রতিবাদের ঝড়ে, মানুষের কষ্টে সবল সমবেদনা রাখলেন,
অন্ধকারকে চিরতরে ছিন্ন করে আলোয় বিশ্বাস রাখলেন।
প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার আলোয় জাতিকে পথ দেখালেন,
চিরন্তন ইতিহাসের পাতায় নাম অম্লান, স্মৃতিতে জ্বলন্ত।
১৯৯৩ সালের ৩১ অক্টোবর, তেজগাঁওয়ের ৮৪ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ—
অমলিন জীবন সমাপ্ত হলেও, আদর্শ, প্রজ্ঞা ও মানবিক দর্শন চিরজ্বলন্ত।
জীবনের প্রতিটি ছন্দে, দেশের কল্যাণে, মানুষের সেবায় আলোকিত ছিলেন তিনি,
ফকির আবদুল মান্নান শাহ—এক প্রজ্ঞাময় নেতা, যিনি ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টিতে,
দার্শনিক ও বিপ্লবী মননের আলো ছড়িয়ে,
দেশপ্রেম ও ন্যায়ের অমোঘ প্রদীপ হয়ে চিরজীবন্ত।
--------------------------------------------------------------
No comments:
Post a Comment